শ্রী শ্রীমৎ ভক্তি পুরুষোত্তম স্বামী
ত্রিদণ্ডি সন্ন্যাসী, ইসকন জিবিসি,মায়াপুর,ভারত
চেয়ারম্যান: ইন্ডিয়া ট্রাইবাল কেয়ার ট্রাস্ট
শ্রী শ্রীমৎ ভক্তি পুরুষোত্তম স্বামী মহারাজের জীবনীঃ
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল প্রভুপাদের কৃপাধন্য, শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজের প্রিয় সন্ন্যাসী শিষ্য ও ইসকন জিবিসি শ্রীমৎ ভক্তি পুরুষোত্তম স্বামী মহারাজ । শ্রীল ভক্তি পুরুষোত্তম স্বামী মহারাজ ১৯৫৭ সালের বৈশাঁখ মাসের পবিত্র মোহিনী একাদশী তিথিতে শ্রীজগন্নাথ পুরীধামে আবির্ভূত হন। ছোটবেলায় তার নাম ছিল মহেশ চন্দ্র পট্টনায়ক, তার পিতার নাম শ্রী আর্তবন্ধু পট্টনায়ক ও মাতা শ্রীমতী শৈলবালা পট্টনায়ক। তার গ্রামের নাম ছিল কলামতি। শ্রী আর্তবন্ধু পট্টনায়ক ও শ্রীমতী শৈলবালা পট্টনায়কের মোট তিন পুত্র ও তিন কন্যা সন্তানের মধ্যে মহেশ চন্দ্র পট্টনায়ক ছিল ছোট ছেলে ।
শ্রীল ভক্তি পুরুষোত্তম স্বামী (মহেশ চন্দ্র পট্টনায়ক), বাকু উচ্চ বিদালয়ে ও সামন্ত চন্দ্র শেখর কলেজে লেখাপরা করেছেন। সামন্ত চন্দ্র সেখর কলেজে স্নাতক ২য় বর্ষে লেখাপরা করার সময় তিনি ইসকন (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের) সান্নিধ্যে আসেন এবং তিনি শ্রীল প্রভুপাদের ২ জন শিষ্য শ্রী পদ্মপানি প্রভু ও তমহর প্রভুর সাথে পরিচিত হন ।
মহারাজ তখন পদ্মপানি প্রভু ও তমহর প্রভু কে মহারাজদের বাড়িতে একটি হরিনাম সংকীর্তন করার জন্য অনুরোধ করেন । তখন থেকে মহারাজ শ্রীল প্রভুপাদের অনেক গ্রন্থ সংগ্রহ করেন এবং দৈব কারন বসত শারীরিক অসুস্থ থাকার কারনে কয়েক মাস বাড়িতে অবস্থানকরতে হয়েছিল । বাড়িতে অবস্থান কালে মহারাজ প্রভুপাদের সমস্ত গ্রন্থঅধ্যয়ন করেন এবং ইসকনে যোগ দান করার জন্য মনস্থির করেন ।
মহারাজ ১৯৭৮ সালে প্রথম শ্রীল জয়পতাকা মহারাজের সাথে সাক্ষাৎ করেন , তখন থেকে শ্রীল জয়পতাকা মহারাজের সাথে নিয়মিত পত্র বিনিময় করতেন । পরবর্তীতে স্নাতক ৪র্থ বর্ষে লেখাপরা করার সময় শ্রীল জয়পতাকা মহারাজ নিজে তার গাড়িতে করে শ্রীমৎ ভক্তি পুরুষোত্তম স্বামী মহারাজ কে পুরিধাম থেকে শ্রী ধাম মায়াপুরে নিয়ে আসেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯, সালের গৌর পূর্নিমা তে হরিনাম দীক্ষা প্রদান করেন । দীক্ষাকালে তার নাম হয় জগদীশ দাস ব্রম্মচারী ।
পরবর্তী বছর ২২ জুলাই ১৯৮০ সালে কলকাতা মন্দিরে ব্রাম্মন দীক্ষা লাভ করেন। শুরুতে মহারাজ শ্রীধাম মায়াপুর সংকীর্তন বিভাগের ও মায়াপুরে নৌকাতে করে প্রচারের নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং পরবর্তীতে ইসকন কলকাতা মন্দিরে গ্রন্থ প্রচারের দায়িত্ব গ্রহন করেন । মহারাজ ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ইসকন ভুবন্বেশ্বর মন্দিরের অধ্যক্ষ হিসেবে সুদক্ষভাবে প্রচার কার্য সম্পাদন করেন। প্রথম থেকেই শ্রীল জয়পতাকা মহারাজের খুব প্রিয় শিষ্য ছিলেন এবং প্রথম সন্ন্যাসী শিষ্য শ্রী শ্রীমৎ ভক্তি পুরুষোত্তম স্বামী মহারাজ । মহারাজ ১৯৮৫ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর শ্রীল জয়পতাকা স্বামী মহারাজের থেকে কলকাতা মন্দিরে ত্রিদন্ডী সন্ন্যাস গ্রহন করেন এবং ভক্তি পুরুষোত্তমস্বামী হিসেবে ইসকনের ভূবনে প্রসার লাভ করেন ।
ভক্তিবেদান্ত ন্যাশনাল স্কুল, মায়াপুর
মহারাজের কর্ম দক্ষতা এবং আধ্যাত্মিক চেতনায় সন্তুষ্ট হয়ে শ্রীল জয়পতাকা মহারাজ ১৯৮৭ সালে ইসকনের প্রধান কার্যালয় শ্রীধাম মায়াপুরের জেনারেল ম্যানেজার পদে অধিষ্ঠিত করে ভক্তি পুরুষোত্তম স্বামী মহারাজকে ভুবনেশ্বর থেকে মায়াপুর নিয়েআসেন। মহারাজের নেতৃত্বে ধীরে ধীরে মায়াপুরে গীতা করোসপনডেন্ট কোর্স , জাগ্রত ছাত্র সমাজ কলেজ প্রচার , গ্রন্থ প্রচার দল গড়ে উঠে যা পরবর্তী সময়ে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ ও অন্যান্য এলাকাতে বিস্তার লাভ করে । তখন থেকে মহারাজ শ্রীল জয়পতাকা মহারাজের অধীনে ইসকন প্যান্ডেল প্রোগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করেন যা পরবর্তীতে নামহট্টপ্রচারে রুপান্তরিত হয় ।
ইসকন মায়াপুরের জেনারল ম্যানেজার দায়িত্ব পালনকালে মহারাজ ইসকন মায়াপুরের কো-ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেনএবং পরবর্তীতে একইসাথে মায়াপুর এডমিনিস্ট্রেটিভ কাওন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন । মায়াপুরে ক্রমবর্ধমান গৃহস্থ ভক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ভক্তদের ছেলেমেয়েদের কথা বিবেচনা ও তাদের কল্যানার্থে ভক্তি পুরুষোত্তমস্বামী মহারাজ ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে মায়াপুরে “ভক্তিবেদান্ত ন্যাশনাল স্কুল” প্রতিষ্ঠা করেন । ভক্তিবেদান্ত ন্যাশনাল স্কুল, মায়াপুর, ভারতের কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধিভুক্ত । একই সাথে মহারাজ প্রতি বছর নবদ্বীপ মন্ডল পরিক্রমার বিস্তার সাধনের এবং ভক্তরা যাতে ভালভাবে পরিক্রমা করতে পারেন সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন ।
নবদ্বিপ মণ্ডল পরিক্রমা
শ্রী ক্ষেত্র পরিক্রমা
মহারাজের নেতৃত্বে ও নিরলস প্রচেষ্টায় এবং শ্রীল জয়পতাকা মহারাজের অনুপ্রেরনায় প্রতি বছর হাজার হাজার ভক্তের উপস্থিতিতে শ্রী ক্ষেত্র পরিক্রমা , জগন্নাথ পুরীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে । ইসকন ভক্তদের সেবার পাশাপাশি শ্রীল জয়পতাকা মহারাজের অনুপ্রেরনায় ট্রাইবাল কেয়ার (আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সেবারপরিকল্পনা করেন ) এবং ২০১৬ সালে যুগান্তকারী “ইন্ডিয়া ট্রাইবাল কেয়ার ট্রাস্ট “ গঠন করেন এবং চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করে আসছেন । এত কিছুর মধ্যেও মহারাজ ভক্তদের কথা বিবেচনা অনেক গ্রন্থ রচনা করেন তার মধ্য উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শ্রীজগন্নাথ,শ্রী মন্দির, শ্রীক্ষেত্র পরিক্রমা, রাথযাত্রা, নবদ্বীপ মন্ডল পরিক্রমা, শ্রীমতী রাধারাণীর লীলামহিমা ১ম ও ২য় ভাগ , ভগবান কে, আমি কে , মৃত্যু।
ইন্ডিয়া ট্রাইবাল কেয়ার ট্রাস্ট
মহারাজের সমস্ত গ্রন্থ বাংলা ওঁ ইংরেজি ভাষায় এ রয়েছে এছাড়াও হিন্দি, তামিল, গুজরাটি ভাষায় কিছু গ্রন্থ রয়েছে। বর্তমানে মহারাজ শ্রী ধাম মায়াপুরে সেবার পাশাপাশি বাংলাদেশ , নেপাল, কোরিয়া ও পূর্ব ভারতের জিবিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন । এছাড়াও মহারাজ মায়াপুর, পশ্চিম বঙ্গ , পুরী , উত্তর ও পশ্চিম ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, সিকিম,আসাম, আন্দোমান ও নিকবোর দ্বিপ্পুঞ্জ, ত্রিপুরা, মেঘালয়, ভূটান, নেপাল, বাংলাদেশ, ভারত, কোরিয়ার সহকারী জিবিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন । শ্রী শ্রীমৎ ভক্তি পুরুষোত্তম স্বামী মহারাজ ইসকন জিবিসির ভারতীয় ব্যুরো সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ।
মহারাজ তার নিজস্ব ওড়িয়া ভাষা ছাড়া ও বাংলা এবং ইংরেজি ভাসায় একজন পরিব্রাজক হিসেবে মহারাজ সারা বিশ্বে প্রচার করছেন ।