top of page

জয়পতাকা স্বামী মহারাজের জীবনী

ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংস পরিব্রাজকাচার্য অষ্টোত্তরশত শ্রীশ্রীমৎ জয়পতাকা স্বামী ১৯৪৯ খ্রীষ্টাব্দের ৯ই এপ্রিল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের উইসকন্সিন প্রদেশের মিলৌকি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যে দিনটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেটি ছিল কামদা একাদশী, যে একাদশীটি ঠিক রাম নবমীর পরেই পালিত হয়। তাঁর শৈশবকালে তিনি আধ্যাত্মিকতায় অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও মহান কৌতূহলতা প্রদর্শন করেন। তাঁর বয়স যখন মাত্র এগারো বছর, তাঁর পিতামহের পরামর্শে তিনি ভগবানের দিব্য নাম জপ করার মাধ্যমে নিজেকে এক চর্মরোগের থেকে আরোগ্য করেন।


তাঁর চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি সেন্ট্ জন্স একাডেমী নামক একটি মহাবিদ্যালয়ে যাওয়ার পূর্ব প্রস্তুতিমূলক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। যেখান থেকে তিনি অনায়াসেই স্নাতক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর অর্জন করে তাঁর শ্রেণীতে প্রথমস্থান অধিকার করেন। একজন ছাত্রের মধ্যে মহান প্রতিভা রয়েছে সেটি উপলব্ধি করে আমেরিকার বেশ কয়েকটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় তাকে বৃত্তি প্রদান করেছিল। তিনি ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। নবীন ছাত্ররূপে একজন অতিথির নিকট হতে ভগবান বুদ্ধের জীবনদর্শন শ্রবণ করে তাঁর অন্তরাত্মা জাগরিত হয়ে ওঠে এবং জড় শিক্ষার প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেন। তারপর তিনি পারমার্থিক শিক্ষকের সন্ধান করতে শুরু করেন। যেহেতু পাশ্চাত্যে তিনি কোন সদ্গুরুর সন্ধান পেলেন না তাই তিনি ভারতবর্ষে পাড়ি দিতে মনস্থির করলেন।


যখন তিনি ভারতবর্ষে গমনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন তিনি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের একজন শিষ্যের সাক্ষাৎ লাভ করেন এবং সানফ্রান্সিস্কোতে রথযাত্রার দিনে যোগদান করেন। ঠিক তার পরেই, তিনি শ্রীল প্রভুপাদের সহিত সাক্ষাৎ করার জন্য কানাডার মন্ট্রিয়েল শহরের ইস্কন মন্দিরে স্থানান্তরিত হন। সেখানকার মন্দিরে এক কষ্টের সময় চলাকালীন তিনি মন্দিরের জন্য অর্থ তহবিল সংগঠনের কাজে সহযোগিতা করেন।

শ্রীল প্রভুপাদ তখন তাঁকে দীক্ষাপ্রদান করে জয়পতাকা দাস নাম প্রদান করলেন এবং তাঁর আন্দোলনকে প্রসারিত করার জন্য শীঘ্রই তাঁকে ভারতবর্ষে প্রেরণ করলেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে, জয়পতাকা দাস শ্রীল প্রভুপাদের নিকট হতে জয়পতাকা স্বামী নামের সহিত সন্ন্যাস দীক্ষা গ্রহণ করলেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে, ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব স্থান শ্রীমায়াপুর ধামে ইস্কনের আন্তর্জাতিক প্রধান কার্যালয় নির্মাণের জন্য ভূমি গৃহীত হয়েছিল।


শ্রীল প্রভুপাদ শ্রীল জয়পতাকা স্বামী মহারাজকে শ্রীধাম মায়াপুর সংক্রান্ত বিষয়ে পূর্বতন আচার্যবৃন্দের নির্দেশাবলী পরিপূরণের জন্য দায়িত্ব অর্পণ করে বললেন, “আমি তোমাকে ভগবানের ধাম প্রদান করেছি। এখন তুমি এর উন্নতি সাধন করো।” এই নির্দেশকে হৃদয়ে গ্রহণ করে তিনি শ্রীমায়াপুর ধামের উন্নয়ন সাধনে সহযোগিতার জন্য এক মহান কৃতিত্বপূর্ণ সেবা সম্পাদন করে চলেছেন। তার সঙ্গে তিনি স্থানীয় এলাকাসমূহ এবং কোলকাতা থেকে আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে প্রচার কার্যও শুরু করেন। শ্রীল প্রভুপাদের অনুমোদন ও নির্দেশনায় এবং শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর ও শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি পশ্চিমবঙ্গে সঙ্গবদ্ধ প্রচারও (নামহট্ট সংঘ) সংগঠিত করেন। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে শ্রীল প্রভুপাদের অনুমোদনক্রমে তিনি ইস্কনের গভর্নিং বডি কমিশনের একজন সদস্যরূপে নিযুক্ত হয়েছিলেন।


এই জগৎ থেকে শ্রীল প্রভুপাদের প্রস্থানের পর তিনি গভর্নিং বডি কমিশনের দ্বারা তাঁর দায়িত্ব সম্প্রসারণ করার জন্য ভারতবর্ষের ভিতরে ও বাহিরের বিভিন্ন অংশে কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের কাজ দেখাশোনার জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত হন। এইভাবে যখন তার প্রচারের ক্ষেত্র ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হতে লাগল, তিনি ভ্রমণ করতে লাগলেন এবং তখন থেকেই শ্রীশ্রীমৎ জয়পতাকা স্বামী মহারাজ পরিভ্রমণ করে চলেছেন এবং তাঁর স্বাস্থ্যের প্রতিকুলতা থাকা সত্ত্বেও ভারতবর্ষে তথা সমগ্র বিশ্বব্যাপী কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের প্রসার করতে নিরলসভাবে কার্য করে চলেছেন।


শ্রীল প্রভুপাদ নিজেও তাঁকে তাঁর নিত্যলীলায় প্রস্থানের পর দীক্ষা প্রদান করতে এবং শিষ্যদেরকে নির্দেশাবলী প্রদান করতে নির্দেশ করেছিলেন, তিনি তাই সম্পাদন করে চলেছেন। তাঁর শিষ্যসমূহ সঙ্গে নিয়ে ইস্কনের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সেবা করে চলেছেন এবং দূর-দূরান্তে শ্রীল প্রভুপাদ ও ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষার মহিমা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমাদেরকে ক্রমাগত অপরিমেয় আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণা প্রদান করে চলেছেন।

47 views0 comments

Recent Posts

See All

পদ্মিনি একাদশী মাহাত্ম্য

স্মার্তগণ পুরুষোত্তম মাস বা অধিমাসকে ‘মলমাস’ বলে এই মাসে সমস্ত শুভকার্য পরিত্যাগ করে থাকেন। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই মাসকে পারমার্থিক...

ভৈমি/জয়া একাদশী মাহাত্ম্যা

মাঘী শুক্লপক্ষীয়া ‘জয়া’ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ভবিষ্যোত্তর পুরাণে যুধিষ্ঠির-শ্রীকৃষ্ণ সংবাদরূপে বর্ণিত আছে। শ্রীগরুড়পুরাণে মাঘ মাসের...

Kommentare


bottom of page