ভৈমি / জয়া একাদশী মাহাত্ম্যা
গরুড় পুরাণে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীকে 'ভৈমী' একাদশী নামে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। যুধিষ্ঠির মহারাজ কৃষ্ণের কাছে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী সম্পর্কে জানতে চাইলেন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন এই একাদশী 'জয়া' নামে প্রসিদ্ধ। একবার ইন্দ্রের রাজসভায় পঞ্চাশ কোটি অপ্সরা নৃত্য করছিলেন। নৃত্যের সাথে গন্ধর্বগণ গান করতে লাগলেন। পুষ্পদত্ত, চিত্রসেন প্রভৃতি প্রধান প্রধান গন্ধর্বেরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। চিত্রসেনের কন্যার নাম ছিল পুষ্পবন্তী। পুষ্পদত্তের পুত্রের নাম মাল্যবান। এই মাল্যবান পুষ্পবন্তীর রূপে মুগ্ধ হয়েছিল। ইন্দ্রের প্রীতিবিধানের জন্য তারা দুজনেই নৃত্যগীতের সেই সভায় যোগদান করেছিল। কিন্তু একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট থাকায় উভয়েরই চিত্ত বিভ্রান্ত হচ্ছিল। সেখানে তারা পরস্পর কেবল দৃষ্টিবদ্ধ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকলো। ফলে গানের ক্রম বিপর্যয় ঘটল।
তাদের এই রকম তাল-মান ভঙ্গভাব দেখে তারা যে পরস্পর কামাসক্ত হয়েছে, দেবরাজ ইন্দ্র তা বুঝতে পারলেন। তখন ক্রোধবশে তিনি তাদের অভিশাপ দিলেন তারা উভয়েই পিশাচযোনী লাভ করে মর্ত্যলোকে দুঃখ ভোগ করবে। ইন্দ্রের অভিশাপে তারা দুজন দুঃখিত মনে হিমালয় পর্বতে বিচরণ করছিল। পিশাচত্ব প্রাপ্ত হওয়ায় তারা অত্যন্ত দুঃখ ভোগ করতে লাগল। হিমালয়ের প্রচণ্ড শীতে কাতর হয়ে নিজেদের পূর্বপরিচয় বিস্মৃত হয়ে তারা ভাবতে থাকলো যে, তারা কোন পাপ না করেই এই শাস্তি ভোগ করছে তাই আর কোন পাপ করবে না।
তাদের পূর্বকৃত কোন পুণ্যের কারণে সেই সময় মাঘী শুক্লপক্ষীয়া 'জয়া' একাদশী তিথি উপস্থিত হল।
তারা একটি অশ্বত্থ বৃক্ষতলে নিরাহারে নির্জলা অবস্থায় দিন-রাত যাপন করলো। শীতের প্রকোপে অনিদ্রায় রাত্রি অতিবাহিত হলো। পরদিন সূর্যোদয়ে দ্বাদশী তিথি উপস্থিত হল। জয়া একাদশীর দিন অনাহার ও রাত্রি জাগরণে তাদের ভক্তির অনুষ্ঠান পালিত হলো। এই ব্রত পালনের ফলে ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় তাদের পিশাচত্ব দূর হলো। তারা দুজনেই তাদের পূর্বরূপ ফিরে পেল। তারপর তারা স্বর্গে ফিরে গেল। দেবরাজ তাদেরকে দেখে অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হয়ে কিভাবে তারা পিশাচযোনী থেকে উদ্ধার পেল, তা জানতে চাইলেন। মাল্যবান বললেন যে, জয়া একাদশী ব্রতের পুণ্যপ্রভাবে পিশাচত্ব দূর হয়েছে। তাদের কথা শুনে দেবরাজ ইন্দ্র তাদের আবার অমৃত পান করতে বললেন এবং আরও বললেন একাদশী ব্রতে যাঁরা আসক্ত এবং যাঁরা কৃষ্ণভক্তি-পরায়ণ তাঁরা দেবতাদেরও পূজ্য। এই 'জয়া' ব্রত ব্রহ্মহত্যাজনিত পাপকেও বিনাশ করে। এই ব্রত পালনে সমস্ত প্রকার দানের ফল লাভ হয়। সকল যজ্ঞ ও তীর্থের পুণ্যফল এই একাদশী প্রভাবে আপনা হতেই লাভ হয়। অবশেষে মহানন্দে অনন্তকাল বৈকুণ্ঠ বাস হয়। এই জয়া একাদশী ব্রতকথা পাঠ ও শ্রবণে অগ্নিষ্টোম যজ্ঞের ফল পাওয়া যায়। এই তিথি সর্বপাপবিনাশিনী, সর্বশ্রেষ্ঠা, পবিত্রা, সর্বকাম ও মুক্তি প্রদায়িনী। এই ব্রতের ফলে মানুষ কখনও প্রেতত্ব প্রাপ্তি হয়না।