একদিন মহারাজ যুধিষ্ঠির ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন হে প্ৰভু ! শ্ৰাবণ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি তা কৃপা করে আমাকে বলুন ।
শ্ৰীকৃষ্ণ বললেন - হে মহারাজ ! এখন আমি সেই পবিত্ৰ ব্ৰত মাহাত্ম্য বৰ্ণনা করছি , মনোযোগ দিয়ে তা শ্ৰবণ করুন । যা শোনামাত্ৰেই বাজপেয় যজ্ঞের ফললাভ হয়।"প্ৰাচীন কালে দ্বাপর যুগের শুরুতে মহিজীৎ নামে এক বিখ্যাত রাজা ছিলেন। তিনি মাহিম্মতি নগরে রাজত্ব করতেন।কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে তার মনে বিন্দুমাত্ৰ সু- শাস্তিছিল না । কেননা তিনি ছিলেনঅপুত্ৰক । পুত্ৰহীনের ইহলোক পরলোককোথাও সুখ হয় না ”।এইরুপ চিন্তা করতে করতে বহুদিন কেটেগেল ।
কিন্তু তবুও পুত্ৰমুখ দশনে রাজাবঞ্চিতই রইলেন । নিজেকে অত্যন্তদুৰ্ভাগা মনে করে রাজা চিন্তাগ্ৰস্তহলেন । প্ৰজাদের সামনে গিয়ে বলতেলাগলেন, ''হে প্ৰজাবৃন্দ । তোমরা শোন। আমি এই জন্মে তো কোন পাপকাজকরিনি , অন্যায়ভাবে আমার রাজকোষবৃদ্ধি করিনি , ব্ৰাহ্মণ বা দেবতাদেরসম্পদ কখনও গ্ৰহণ করিনি উপরন্তুপ্ৰজাদেরকে পুত্রের মতো পালনকরেছি , ধৰ্ম অনুযায়ী পৃথিবী শাসন করেছি । দুষ্টদের যথানুরুপ দণ্ড দিয়েছি ,সজ্জন ব্যক্তিদের যথাযোগ্য সন্মান করতেও কখনও অবহেলা করিনি ।
তাইহে ব্ৰাহ্মণগণ , এই প্ৰকার ধৰ্মপথ অবলম্বন
করা সত্ত্বেও কেন আমার পুত্ৰ লাভ হলনা , তা আপনারা কৃপা করে অনুসন্ধানকরন''। রাজার এই প্ৰকার কাতর উক্তি শ্ৰবণেব্যথিত রাজভক্ত পুরোহিত ব্ৰাহ্মণগণ রাজার মঙ্গলের জন্য গভীর বনেত্ৰিকালজ্ঞ মুনিঋষির কাছে যেতেমনস্থ করলেন । বনের মধ্যে ঋষিদের আশ্ৰমসকল দেখতে দেখতে তারা একমুনির সন্ধান পেলেন । তিনি দীৰ্ঘায়ু ,নীরোগ নিরাহারে ঘোর তপস্যায় মগ্নছিলেন ।সর্বশাস্ত্ৰ বিশারদ ধৰ্মতত্ত্বজ্ঞ ওত্রিকালজ্ঞ সেই মহামুনি লোমশ নামেপরিচিত । ব্ৰহ্মার এক কল্প অতিবাহিতহলে মুনিবরের গায়ের একটি লোম
পরিত্যক্ত হোত । এই কাণে এই মহামুনিরনাম লোমশ । তাকে দেখে সকলেই ধন্যহলেন । তারা পরস্পর বলতেলাগলেন যে , আমাদের বহু জন্মেরসৌভাগ্যের ফলে আজ আমরা এইমুনিবরের সাক্ষাৎ লাভ করলাম । তারপরমুনিবর তাদের সম্বোধন করে বললেন কি
কারণে আপনারা এখানে এসেছেনএবং কেনই বা আমার এত প্ৰশংসাকরছেন , তা স্পষ্ট করে বলুনা আপনাদেরযাতে মঙ্গল হয় , আমি নিশ্চয়ই তারচেষ্টা করব ।
ব্ৰাহ্মণেরা বললেন হে ঋষিবর । আমরাযে উদ্দেশ্যে এখানে এসেছি আপনিতা কৃপা করে শুনুন । এ পৃথিবীতে আপনার মতো শ্ৰেষ্ঠ ব্যক্তি আর কোথাওনেই । মহীজিৎ নামে এক রাজানিঃসন্তান হওয়ায় অতি দুঃখেদিনযাপন করছে । আমরা তার প্রজা ,তিনি আমাদেরকে পুত্রের মতো পালন করেন । কিন্তু তিনি পুত্ৰহীন বলেআমরা সবাই মর্মাহত। তার দুঃখ দূর করতে
আমরা এই বনে প্ৰবেশ করেছি । হেব্ৰাহ্মাণশ্ৰেষ্ঠ । রাজা যাতে পুত্রেরমুখ দৰ্শন করতে পারেন , কৃপা করে তারকোন উপায় আমাদের বলুন ।তাদের কথা গুনে মুনিবার ধ্যানমগ্ন হলেন । কিছু সময় পরে রাজারপূর্বজন্মবৃত্তান্ত বলতে লাগলেন । এইরাজা পূৰ্ব্বজন্মে এক দরিদ্র বৈশ্যছিলেন । একবার তিনি একটি অন্যায়কাৰ্য করে ফেলেন । ব্যবসা করবার জন্য
তিনি এক গ্ৰাম থেকে অন্য গ্ৰামেযাতায়াত করতেন। এক সময় তিনিশুক্লাপক্ষের দশমীর দিনে কোথাওযাওয়ার পথ্র তিনি অত্যন্ত তৃষার্ত হয়েপড়েন । গ্ৰাম প্ৰান্তে একটি জলাশয়দেখতে পান । সেখানে জলপানের জন্যযান । সেই সময় একটি গাভী নানা জলপানকরছিল । তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে তিনি নিন জলপান কাজে লাগলেন। এই পাপকর্মের ফলে তিনি পুত্ৰসুখথেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কিন্তু পূৰ্ব্বজন্মের কোন পুণ্যের ফলে তিনি এইরকম নিষ্কণ্টক রাজ্য লাভ করেছেন।''হে মুনিবর। শাস্ত্ৰে আছে যে পুণ্যদ্বারা পাপক্ষয় হয় । তাই আপনি এমন
একটি পুন্য ব্রতের উপদেশ করুন যাতেতার পারব্দ পাপ দূর হয় এবং আপনারঅনুগ্রহে তিনি পুত্ৰসন্তান লাভ করতেপারেন''।লোমশ মুনি বললেন ''শ্ৰাবণ মাসের শুক্লপক্ষের পবিত্ৰারোপণী একাদশীব্ৰত অভিষ্ট ফল প্ৰদান করে । আপনারা যথাবিধি তা সকলে পালন করুন'' । লোমশমুনির উপদেশ শুনে আনন্দ চিত্তে গৃহেপ্ৰত্যাবর্তন করে তঁরা রাজাকে সেসকল কথা জানালেন । তারপর সকলেমিলে মুনির নিৰ্দেশ অনুসারে ব্ৰত পালন করলেন । তাদের সকলের পুণ্যফলরাজ্যকে প্ৰদান করলেন ।সেই পুণ্যপ্ৰভাবে রাজমহিষী গৰ্ভবতী হলেন ।উপযুক্ত সময়ে বলিষ্ঠ , সৰ্বাঙ্গসুন্দর এক পুত্ৰসন্তানের জন্ম দান করলেন । ভবিষোত্তরপুরাণে এই মাহাত্ম্য বৰ্ণিত
হয়েছে । এই ব্ৰত মাহাত্মা যিনি পাঠ বা শ্ৰবণ করবেন তিনি সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হবেন এবং পুত্ৰসুখ ভোগ করে অবশেষে দিব্যধাম প্ৰাপ্ত হবেন।"
Comments