ষটতিলা একাদশীর মাহাত্ম্য
যুধিষ্ঠির মহারাজ ভগবানকে মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম, বিধি বা এবং তার কী ফল সে সম্পর্কে সবিস্তারে জানতে চাইলেন। ভগবান বললেন, এই একাদশী ষটতিলা নামে জগতে বিখ্যাত। এবং আরও বললেন, একবার নারদ মুনিও এই একাদশীর ফল ও ইতিহাস জানতে চাইলে তিনি নিম্নোক্ত কাহিনীটি বলেছিলেন।
‘এক সময় দালভ্য ঋষি মুনিশ্রেষ্ঠ পুলস্ত্যকে জিজ্ঞাসা করেন মর্ত্যলোকে মানুষেরা ব্রহ্মহত্যা, গোহত্যা, অন্যের সম্পদ হরণ আদি পাপকর্ম দ্বারা যে নরক প্রাপ্ত হয়, তা থেকে রক্ষার উপায় কী। পুলস্ত্য ঋষি বলেন মাঘ মাসে শুদ্ধচিত্তে কৃষ্ণপ্রীতির জন্য পূজা করা এবং ব্রাহ্মণকে জলপূর্ণ কলস, ছত্র, বস্তু, পাদুকা, গাভী ও তিলপাত্র দান করা অত্যন্ত শুভ। তিলদ্বারা স্নান, তিল শরীরে ধারণ, তিল জল মিশিয়ে তা দিয়ে তর্পণ, তিল ভোজন এবং তিল দান – এই ছয় প্রকার বিধানে সর্বপাপ বিনষ্ট হয়ে থাকে। এই জন্য এই একাদশীর নাম ষটতিলা।
পুরাকালে মর্ত্যলোকে দেবপূজা ও ব্রতপরায়ণ এক ব্রাহ্মণী বাস করতেন। তিনি যথাযথভাবে বৈষ্ণবদের অর্চনও করছিলেন, কিন্তু তাদের পরিতৃপ্তির জন্য কখনও অন্নদান করেননি। তাই ভগবান একদিন কাপালিক রূপ ধারণ করে তামার পাত্র হাতে নিয়ে তার কাছে গিয়ে 'সুন্দরী' বলে সম্বোধন করে ভিক্ষা প্রার্থনা করলে তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে সেই পাত্রে একটি মাটির ঢিলা নিক্ষেপ করেন। ব্রত প্রভাবে তিনি সশরীরে স্বর্গে গমন করেন। মাটির ঢেলা দানের ফলে তিনি একটি মনোরম গৃহ প্রাপ্ত হন, কিন্তু সেখানে কোন ধান বা চাল কিছুই ছিল না।
গৃহশূন্য দেখে মহাক্রোধে তিনি ভগবানের কাছে গেলে ভগবান তাকে বললেন নিজ গৃহে দরজা বন্ধ করে বসে থাকতে এবং সে মর্ত্যবাসী হয়েও সশরীরে স্বর্গে আসায় দেবপত্নীরা তাকে দেখতে আসলে তাদের কাছে ষটতিলা ব্রতের পুণ্যফল প্রার্থনা করতে। এরপর দেবপত্নীরা সেখানে এসে তার দর্শন প্রার্থনা করলে তিনি ব্রতফল প্রার্থনা করেন। এক দেবপত্নী তার ষটতিলা ব্রতজনিত পুণ্যফল তাকে প্রদান করার পর সেই ব্রাহ্মণী দিব্যকান্তিবিশিষ্টা হলেন এবং তার গৃহ ধনধান্যে ভরে গেল। নিজসাধ্য মতো তিল, বস্ত্র ও অল্প দান করলে ষটতিলা ব্রতের প্রভাবে দরিদ্রতা, শারীরিক কষ্ট, দুর্ভাগ্য প্রভৃতি বিনষ্ট হয়। এই বিধি অনুসারে তিলদান করলে মানুষ অনায়াসে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়।"